
আসিয়ানের মধ্যস্থতা ঘিরে প্রায় সপ্তাহখানেক নীরব ছিল মিয়ানমার। এ সময়ে বিদ্রোহী সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করলেও কোনো বিক্ষোভ হয়নি। তবে আসিয়ানের ব্যর্থতায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমার।
রোববার (২ মে) হাজারো মানুষ তিন মাসে জেঁকে বসা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাস্তায় নামেন। এর মধ্যে অন্তত তিনটি স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে চার জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এমন রক্তাক্ত বিক্ষোভের আগে গত কয়েক দিন ধরে বৈশ্বিকভাবে এ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয় মিয়ানমারের বিভিন্ন সম্প্রদায়। তারা এটিকে বৈশ্বিকভাবে নাম দিয়েছে ‘মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লব’। আয়োজকরা এক বিবৃতিতে বলেছে, মিয়ানমারের জনগণের ঐক্যের পক্ষে বিশ্বকে সোচ্চার হতে হবে। জান্তার অন্তরে কাঁপুনি ধরাতে হবে।
বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনে রোববার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। শহরের অলিগলিতে তারা স্লোগানে স্লোগানে কাঁপুনি তোলেন। এদিন বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে মান্দালয় এবং মেকতিলা ও দক্ষিণ দাইয়ির কেন্দ্রীয় শহরেও।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম গত শনিবার রাতে খবর দিয়েছে, বিগত ৩৬ ঘণ্টায় ইয়াঙ্গুনে অন্তত ১১টি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়েছে। সরকার বলেছে, মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা চায় না, এমন বিদ্রোহীরা হাতে তৈরি বোমা সরকারি স্থাপনা ও সড়কে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
রোববার সকালেও পুলিশের একটি ক্যাম্পের বাইরে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খিত টিত। এতে কোনো হতাহতের খবর না দিলেও কয়েকটি গাড়ি পুড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
মিয়ানমার নাও খবর দিয়েছে, ওয়েটলেটের কেন্দ্রীয় শহরে দুই বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। উত্তরপূর্বের হিসপাওতে পুলিশের গুলিতে আরেক বক্তি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউজপোর্টাল শিউয়ি পি মায়াই। এ ছাড়া কাচিন নিউজ গ্রুপ বলেছে, উত্তরাঞ্চলের দামি জাদে পাথরের শহর হাপাকান্তে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।
তবে রয়টার্স এসব খবরের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। এমনকি জান্তা সরকারের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও কোনো মন্তব্য করেনি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন অং সাং সু চিকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকে দেশটির জনগণ বিক্ষোভ করছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমেন সমানে গুলি চালাচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে ৭৫৮ বিক্ষোভকারী নিহত ও সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিভিন্ন বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীগুলো জান্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, তাদের সাথে সেনাবাহিনীর প্রায় সংঘর্ষ হচ্ছে। এতে গত তিন মাসে উত্তর ও পূর্ব মিয়ানমারের কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ ভয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।