নন্দীগ্রামে মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ

বগুড়ার নন্দীগ্রামে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জমি/পজিশন ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া-নাটোর হাইওয়ের পাশে রণবাঘা বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকান ঘর নিজের দাবি করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মিলন কুমার কর্মকারের নিকট কয়েক লাখ টাকায় বিক্রয় করার অভিযোগ উঠেছে রুপম হোসেন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে দোকানটিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছেন জহির শেখ নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি। তাকে না জানিয়েই তার দোকান গোপনে ক্রয়-বিক্রয় করছে বলে অভিযোগ করেছেন জহির।

জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা বাসস্ট্যান্ডে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে মুদি এবং ফলমূলের দোকন করে আসছেন জহির শেখ। এই জমির/পজিশনের মালিকানা দাবি করছেন রুপম হোসেন। সেই মালিকানা সূত্রে জায়গা/পজিশন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন কুমার কর্মকারের নিকট বিক্রয় করেছে বলে অভিযোগ উঠে। এ কারণে মিলন কুমার কর্মকার নিজের ক্রয়কৃত জমি ছেড়ে দিতে জহির শেখের উপর চাপ সষ্টি করে। তবে এই জমির প্রকৃত মালিক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে, সওজের জায়গা কেউ বিক্রি করতে পারে না। কারো বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথের জমি/পজিশন বিক্রয়ের অভিযোগ উঠলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জহির শেখ বলেন, এই জায়গায় আমি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। তাই আমি এই জায়গা ছেড়ে দিলে কোথায় ব্যবসা করবো? আমি একজন গরীব মানুষ, এখানে ব্যবসা করেই আমার পরিবার চালাই। রুপম নিজেকে এই জমির মালিক দাবি করে মিলনের কাছে পজিশন বিক্রি করে দিয়েছে। এখন মিলন এসে আমাকে পজিশন ছেড়ে দিতে চাপ দিচ্ছে। এই জায়গা তো সরকারের। আমি দীর্ঘ দিন থেকে ব্যবসা করছি। রুপম জায়গার মালিক হয়ে মিলনের কাছে কিভাবে বিক্রি করে? আমি অসহায় গরীব মানুষ। আমি এর বিচার চাই।

স্থানীয় অন্যান্য দোকানদার এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রায়ই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অভিযান চলে। এসময় অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। স্থানীয় অনেক গরীব মানুষ অস্থায়ী স্থাপনা বা কাপড়, তাবু খাটিয়ে মুদি দোকান চালাচ্ছেন। জহির শেখও তেমনই একটু জায়গায় তাবু খাটিয়ে ব্যবসা করে পরিবারসহ জীবন-যাপন করছেন। সরকারী সেই জায়গার মালিক দাবি করে রুপম হোসেন জায়গাটি মিলন কুমার কর্মকারের নিকট বিক্রয় করে। এর পরেই মিলন কুমার তার ক্রয়ক্রিত জায়গা ছেড়ে দিতে জহিরের উপর চাপ দিতে শুরু করে। তবে জহির সেই জায়গা না ছাড়ায় বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। মিলন স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় সেই প্রভাব খাটিয়ে দোকানের জায়গাটি দখলে নেবার পায়তার করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় পাশের হোটেল ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক বলেন, জহির মত অনেকেই সরকারী জায়গায় ব্যবসা করছে। এখানে যে দখলে থাকে সেই ব্যবসা করে। হঠাৎ করে শুনি এই জায়গা রুপমের কাছ থেকে মিলন ৪লাখ টাকায় কিনে নিছে। এ ব্যাপারে আমি মিলনকেও জিজ্ঞাসা করছিলাম, সেও বলছে সে ৪ লাখ টাকায় জায়গা কিনছে। সরকারী জায়গা তো কেউ কিনতে পারে না। এরা কিনলেই তো আর তাদের জায়গা হয়ে যাবে না। তবে জহির যেহেতু এখানে দীর্ঘ দিন থেকে ব্যবসা করছে তাহলে সে এই জায়গা ছাড়বে কেন?

স্থানীয় এলাকাবাসী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জহির এখানে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ব্যবসা করছে। এর মাঝে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার রাস্তার দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। গত ২০১৯ সালেও অভিযান চালিয়েছে। জহির গরীব মানুষ হওয়ায় এবং অন্য কোন গতি না থাকায় তাবু খাটিয়ে ফল ও পান-বিড়ির দোকান করে সংসার চালাচ্ছে। হঠাৎ করেই মিলন এসে দাবি করে সে এই জায়গটি ৪ লাখ টাকায় রুপমের কাছ থেকে কিনেছে। তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে আমি রুপমকেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সেও বলেছিল ৪লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। সরকারী জায়গা এরা কিভাবে বিক্রি করে বা আরেকজন কিভাবে কিনে তা আমাদের মাথায় আসে না। পরে জহিরকে দোকান ছেড়ে দেবার জন্য মিলন হুমকি-ধামকি দেয়। আমরা স্থানীয় কয়েকজন এতে বাঁধা দেই। আমরা এসব ভূমিদস্যদের বিচার চাই।

এ বিষয়ে রুপম হোসেন বলেন, জহির শেখকে আমি দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছি। সে এখন ঐ পজিশন নিজের দাবি করে পিছনের অংশ অন্যের কাছে বিক্রয় করার চেষ্টা চালায়। তখন আমি রণবাঘা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মিলন কুমার কর্মকারের সহযোগিতা চেয়েছি। সে আমাকে সহযোগিতা করছে। তার কাছে আমি পজিশন বিক্রি করিনি।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন কুমার কর্মকার বলেন, রুপম জহিরকে দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছিলো। জহির ঐ জায়গা নিজের পজিশন হিসেবে দাবি করছে। আমি এই পজিশন ক্রয় করিনি। রুপম আমার সহযোগিতা চাইলে তার পজিশন ঠিক রাখতে সহযোগিতা করেছি মাত্র।

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নাম ভেঙ্গে যদি কেউ কিছু করে তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গা বা পজিশন কেউ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না। কেউ বিক্রয় করলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রতিবেদক : টিটু আহম্মেদ  (স্টাফরিপোর্টার)