আবারও মরাদেহ দাফনে নেমে পড়লেন খোরশেদ

রাত তখন সাড়ে ৩টার মতো। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই সময় ফোন আসলো, ও প্রান্ত থেকে বলা হলো- করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের পরিবারের এক সদস্য মারা গেছেন। কিন্তু লাশ এনে গোসল ও দাফনের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার সাহায্য চান তারা। নিজের টিমের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবাইকে পাওয়া গেল না। তাই নিজেই বেরিয়ে পড়লেন লাশের গোসল ও দাফনের জন্য। অথচ নিজেই আক্রান্ত হওয়ার পর এখন আইসোলেশনে আছেন!

নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কার কথা বলা হচ্ছে। তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আলোচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোর‌শে‌দ। সম্প্রতি দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নারায়ণগঞ্জে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর লাশের গোসল বা দাফন কিংবা সৎকারের লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি আত্মীয়-স্বজনও লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যেতে থাকেন। এমনই পরিস্থিতিতে সাহসী উদ্যোগ নেন করোনাযোদ্ধা খোরশেদ। গড়ে তোলেন ‘টিম খোর‌শেদ’ নামের ১৩ সদস্যদের একটি টিম। যার লিডার তিনি।

এর পর নীরবে তাদের কাজ করে গেলেও তা আর নীরব থাকেনি। মিডিয়ায় তাদের মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে পড়ে। তারা হিরো বনে যান দেশবাসী কাছে। কিন্তু সম্প্রতি নিজেই সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হন আলোচিত এই করোনাযোদ্ধা। নারায়ণগঞ্জের পর ঢাকায় এনে তার চিকিৎসা করানো হয়। সুস্থ হয়ে তিনি এখন আইসোলেশনে আছেন। কিন্তু আইসোলেশনের থাকা মেয়াদও তিনি শেষ করতে পারলেন না। সামাজিক দায়িত্ববোধ ও পরিস্থিতি তাকে ঘরের বাইরে যেতে বাধ্য করলো।

councilor khorshed narayangonj

জানা যায়, শনিবার সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই টিমের সদস্যদের নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেন খোরশেদ। এর মাধ্যমে তারা ৮০টি মরদেহের দাফন বা সৎকার সম্পন্ন করলেন।

দাফ‌ন কার্য সম্পন্নের প‌র কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমরা ৮০তম দাফন সম্পন্ন করলাম। ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি বসির উদ্দিন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা হাজী ইদ্রিস আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। লাশ এলাকায় এনে গোসল ও দাফনের জন্য কাউকে পায়নি তার পরিবার।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় রাত ৩টায় আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চান পরিবারের সদস্যরা। এর পর আমরা রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে একত্রিত হই। ভোর ৪টায় মিজমিজি এলাকায় পৌঁছে লাশের গোসল, কাফন ও জানাজা শেষ করি। এর পর সকাল সাড়ে ৬টায় লাশ দাফন করতে সক্ষম হই।