কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের দূর্ভোগ

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মাত্র তিনটি টয়লেট ও তিনটি গোসলখানা আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ আক্রান্ত এক সাংবাদিক।

শাহাদাত হোসেন নামের ওই সাংবাদিক যমুনা টেলিভিশনের একজন সিনিয়র রিপোর্টার। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তিনি হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। সেখানে থাকা করোনা রোগীদের সুবিধা-অসুবিধা ও নিজ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন তিনি।

এই সাংবাদিক বলেন, করোনা পজেটিভ আসার পর খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছিলাম। কিভাবে কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে সহকর্মীদের সহায়তায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে নয় দিন ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হইছে। রোগীরা সবাই অভিভাবকহীন।

চোখের সামনে রোগীরা মারা যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো রোগী মারা গেলে তার লাশ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়ার্ডেই পড়ে থাকে। কেউ দেখতেও আসে না। হয়তো লাশ দাফনকারীর সংখ্যা কম এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তাই। এসব কারণে প্রতিনিয়ত অন্যান্য রোগীর মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে যাচ্ছে।

শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র এক জন চিকিৎসক দেখতে আসেন। তাও অনেক দূর থেকে কথা বলে চলে যায়। প্রয়োজনের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। মাঝখান দিয়ে নার্স না আসায় সকালের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হয়নি। কোনোদিন চিকিৎসক আসেননি, এমনটাও হয়েছে।

হাসপাতালের অসুবিধার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যে ওয়ার্ডে ছিলেন সেখানে মাত্র তিনটি টয়লেট ও তিনটি গোসলখানা। অথচ ওই ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ১০০ জন। তাই পরবর্তীতে চিকিৎসকদের অনুরোধ করে তার শ্বশুরসহ বাড়ি চলে আসেন তিনি।

এ বিষয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, বাইরে থেকে এটা বুঝার উপায় নাই যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ইতোমধ্যে ১৩০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ও এক জন মারা গেছেন। যদি চিকিৎসকরা কাছে না যেতেন তাহলে তারা আক্রান্ত হলেন কীভাবে?

জামিল আহমেদ আরো বলেন, ‘এই হাসপাতালে প্রায় ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত গত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন না। সংসার, বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রীর মুখ দেখতে পারছেন না। এই মানসিক চাপের মধ্যেই সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উপরন্তু তাদের সবাইকে এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া সম্ভব হয়নি, অনেকের কোনো পিপিই নেই।’

‘এত কিছুর পরও অনেকেই হাসপাতালের সমালোচনা করছেন, চিকিৎসকদের সমালোচনা করছেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আসুন, এই ক্রান্তিকালে বরং আপনারা এসে হাসপাতালের দায়িত্ব নিন।’ খেদোক্তি করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ।