হঠাৎ সৌদি সফরে ইমরান খান

পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক কয়েক দশকের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সম্পর্ক ভাঙনের মুখে পড়ে। ২০১৯ সালের আগস্টে ভারত কাশ্মীরিদের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলে রিয়াদের সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়।

পাকিস্তানের অভিযোগ, কাশ্মীরিদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলেও ৫৭ মুসলিম সদস্যের জোট— অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) নিষ্ক্রিয় রয়েছে, যার নেতৃত্বে সৌদি আরব। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ওআইসিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে বিকল্প জোটের চেষ্টাও চালান।

এরপরই পাকিস্তানকে দেওয়া ১ থেকে ৩ বিলিয়ন সুদমুক্ত ঋণ রিয়াদ প্রত্যাহার করে নিলে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক যোগাযোগের পরই রিয়াদ সুর নরম করে। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই ইসলামাবাদের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনে জোর দেয় রিয়াদ।

আল-জাজিরা বলছে, এ যোগাযোগেরই ধারাবাহিকতায় ভাঙনের মুখে পড়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সৌদি আরব সফর করছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে শুক্রবার (৭ মে) তিনি রিয়াদ পৌঁছবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট এজন্ডা নিয়েই ইমরান খান রিয়াদ সফর করছেন। এ সফরে তিনি যুবরাজের সাথে বৈঠক করবেন। এ বৈঠকে ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে থাকা রিয়াদ পাকিস্তানকেও তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে নিরাপদ প্রস্থানের পথ তৈরিতে ব্যবহারের চিন্তা করছে। বিনিময়ে অর্থনৈতিক সহায়তা করবে।

বৈদেশিক নীতি বিষয়ের গবেষক মাদিহা আফজাল বলেন, ‘এ সফরে ইমরান খান দুদেশের পূর্ববর্তী নিবিড় সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাবেন। দুদেশ পরস্পরের উন্নয়নের অংশীদার এবং তারা আগের মতো সম্পর্ক অব্যাহত রাখবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’

ইমরান খানের যাওয়ার আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া গত মঙ্গলবার রিয়াদে পৌঁছান। তাকে রিয়াদ বিমানবন্দরে স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বিলাল আকবর এবং সৌদি আরবের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

দক্ষিণ এশিয়ার থিংকট্যাঙ্কখ্যাত উইলসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক মাইকেল কুজলম্যান বলেন, ‘পাকিস্তানের অন্যান্য সেনাপ্রধানের মতোই জেনারেল বাজওয়া পররাষ্ট্রনীতিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান ধরে রেখেছেন। ইমরান খানের আগেই তার রিয়াদ সফর সেটিই প্রমাণ করে।’

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ সফরে পাকিস্তান অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও দেশটিতে কর্মসংস্থানে জোর দেবে। তবে রিয়াদ চাইবে রাজনৈতিক ঐক্য মজবুত করতে।

ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিসের গবেষক আরহামরা সিদ্দিকী বলেন, ‘সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ফলে রিয়াদ চাইলেও ওয়াশিংটন যাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে বলছে, তাদের সাথে বৈরিতা রাখতে পারবে না তারা, তা সে ছোট কিংবা বড় স্বার্থে হোক। এখন রিয়াদ ও ইসলামাবাদ সমঝোতার ভিত্তিতে সুবিধার অংশীদার হতে চাইবে।’