তরুণীর আত্মহত্যায় বসুন্ধরা এমডির বিরুদ্ধে মামলা

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

এরইমধ্যে আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এ আদেশ দেয়া হয়। এতে আসামির দেশত্যাগ ঠেকাতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নং রোডের ১৯ নং ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মাস দুয়েক আগে লাখ টাকার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসারাত। তিনি মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমানের মেয়ে, বাড়ি কুমিল্লার উজির দিঘিরপাড়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গতরাতেই বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। ওই তরুণীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েরেছ, মিরপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন মোসারাত। বছর দুয়েক হলো সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সাথে তার পরিচয়। তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

২০১৯ সালে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন এবং বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালে বিষয়টি সায়েমের পরিবার জানতে পারলে তার মা মোসারাতকে ঢাকা ছাড়তে ভয়ভীতি দেখান। পরে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে নুসরাতকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন সায়েম।

গুলশানের ওই ফ্লাটটি ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত দম্পতির জাতীয় পরিচয়পত্র নেন আসামি সায়েম সোবহান তানভীর। ফুসলিয়ে মোসারাতকে ঢাকায় আনেন তিনি। গত ১ মার্চ থেকে ফ্লাটটিতে আসা-যাওয়া করতেন আসামি।

এজাহারে আরো বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল মোসারাত বাদীকে ফোন করে জানান, ফ্লাটের মালিকের বাসায় ইফতার করা এবং ছবি তোলায় আনভীর তাকে বকাঝকা করেছেন। ওই ছবি ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট করায় দেখেছেন ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রীর বান্ধবী ‌পিয়াসা। তিনি তানভীরের মাকে সব বলে দেবেন।

আসামি দুবাই চলে যাচ্ছেন জানিয়ে মোসারাতকে বলেছেন, তিনি যেন দ্রুত কুমিল্লায় ফিরে যায়। তাহলে তার মা জানতে পারলে মোসারাতকে মেরে ফেলবে।

২৫ এপ্রিল মোসারাত ফোন করে বাদীকে জানান, আনভীর তাকে ‘শুধু ভোগ করা’ এবং বিয়ে না করার কথা বলেছেন। শত্রুর সঙ্গে দেখা করায় মোসারাতকে ছাড়বেন না বলে আসামি হুমকি দিয়েছেন। আসামি ধোঁকা দিয়েছেন উল্লেখ করে মোসারাত যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কার কথা জানিয়ে পরিবারকে দ্রুত ঢাকায় আসতে বলেন।

ঘটনার দিনের বর্ণনায় এজহারে বলা হয়, ফোন পাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেলা দুইটা নাগাদ ঢাকায় রওনা দেন মামলার বাদী নুসরাত। এরপর থেকে মোসারাতকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পেয়ে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করা হয়। সাড়া না পেয়ে ফ্ল্যাট মালিককে জানালে তিনি মিস্ত্রি এনে তালা ভাঙার পরামর্শ দেন। পরে মিস্ত্রির মাধ্যমে তালা ভেঙে বাসায় ঢুকে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ওড়নায় ঝুলতে দেখেন মোসারাতকে।

পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে ওড়না কেটে তার মৃতদেহটি নামায়। এ সময় আসামির সঙ্গে তোলা ছবি, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ২৬ এপ্রিল যেকোনো সময় মারা যান মোসারাত। সময়টা ওই দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টার মধ্যে হতে পারে। এ বিষয়ে আসামির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাদী নুসরাত।