টিএসসি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি- উপ-উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দৃষ্টিনন্দন ভবনটি ভেঙে নতুন রূপে করার কাজ শুরু হয়েছে বলে গতকাল সোমবার খবর বেরিয়েছে। এর পরদিন আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।

টিএসসি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে এখানকার নতুন নকশার কাজ চলছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নকশা চূড়ান্ত হলে বিস্তারিত জানানো হবে, প্রয়োজনে তা উন্মুক্তও করা হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিএসসির দায়িত্ব নিয়েছেন উল্লেখ করে ঢাবি উপ-উপাচার্য সামাদ বলেন, সৌন্দর্যবোধসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রীর রুচি ও আধুনিক স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। টিএসসি ভবনের জন্য ভালো কিছু হবে নিশ্চয়ই।

নতুন নকশায় টিএসসি ভবন ভাঙতে হলে তাতে সম্মতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার সুযোগ নেই।

গতকালের খবরে বলা হয়, পাকিস্তান আমলে নির্মিত টিএসসি ভবনটি ভেঙে নতুন রূপে গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। নকশা প্রস্তুত করতে ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র নিয়েছে সরকারি এ সংস্থাটি।

এরপরই নতুন রূপের ভবনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার একটি তালিকা তৈরি করে ঢাবির প্রকৌশল দপ্তরকে দেন টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর। সেটি গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিয়েছে প্রকৌশল দপ্তর।

ওই তালিকায় রয়েছে- মহড়াকক্ষ, ব্যায়ামাগার, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কক্ষ, আন্তঃক্রীড়াকক্ষ, পৃথক ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক মিলনায়তন, গাড়ি পার্কিংয়ের ৩ তলা স্থান, অতিথিকক্ষ, সুইমিংপুল ইত্যাদি।

তবে টিএসসির নতুন রূপ বা নকশা এখনো ঠিক করা হয়নি। নকশার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত কর্মকর্তা আলী আশরাফ দেওয়ান জানান, তাকে নকশা তৈরির প্রস্তুতি নিতে বলা হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

জানা যায়, টিএসসির বর্তমান ঐতিহাসিক নকশাটি করেছেন গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেস। এর ভবন তৈরির কাজ আইয়ুব খানের আমলে শেষ হলে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেই থেকে স্থাপনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে আধুনিক টিএসসি ভবন দেখতে চান বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নতুন ভবনের নকশা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ওই মাসেরই ৩০ তারিখ এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় নতুন টিএসসি ভবন নির্মাণের পক্ষে ব্যাখ্যা দেন ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ১৯৬৪ সালে ভবনটি নির্মাণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ও ২০০’র মতো শিক্ষক ছিলেন।

সেই বিবেচনায় ছোট জায়গায় পুরো স্থাপনা তৈরি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ৪০ হাজার শিক্ষার্থী, ২ হাজারের বেশি শিক্ষক। টিএসসি আগের মতো থাকায় পুনর্বিন্যাসের নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর থেকেই টিএসসি ভবনের ভাঙা-গড়া নিয়ে ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। দৃষ্টিনন্দন ভবনটি ভাঙার বিরোধিতা করছেন শিক্ষকদের একটি অংশ।

এ বিষয়ে গতকাল ঢাবির নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছিলেন, টিএসসির নতুন নকশার বিষয়ে তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। গণপূর্তের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকের একটি প্রকল্প হবে এটি। চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধার একটা তালিকা জমা দেয়া হয়েছে, তবে তার অগ্রগতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি।