
করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের যেন অন্ত নেই। নিয়মিতভাবে দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে আসছেন তিনি। এবার তিনি বলেই বসলেন যে, চীনের উহানের ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ ছড়ানোর ব্যাপারে তার কাছে শক্ত প্রমাণ আছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করা হয়, করোনাভাইরাস চীনের উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি ছড়িয়েছে বলে তার যে দাবি- সে ব্যাপারে কোনো প্রমাণ আছে কি না। এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আছে।
যখন জোর দিয়ে বলা হয়, আপনার কাছে এমন কি প্রমাণ আছে যার ভিত্তিতে আপনি এ ধরনের দাবি করছেন, তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে তা বলতে পারব না।’
তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, একই প্রগ্রামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তার প্রশাসন এখনো তদন্ত করছে যে, ভাইরাসটির উৎপত্তি কোথায়, যা তার আগের দাবিকে গুরুত্বহীন করে দেয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমরা সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করছি, কোথা থেকে, কার মাধ্যমে এবং কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। খুব দ্রুতই বিষয়টি জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্প যখন এসব কথা বলছেন, তখন মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রেই।
মার্কিন জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১১ লাখের কাছাকাছি লোক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছে প্রায় ৬৪ হাজার। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে দেড় লাখের বেশি।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশটির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার প্রশাসন কিংবা দেশটির গোয়েন্দারা। প্রথমদিকে তো বিষয়টি নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। তার পর আস্তে আস্তে যখন ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্রে তাণ্ডব শুরু করতে থাকে, তখন সমালোচনা বা অভিযোগের পারদ বাড়তে থাকে।
এর আগের দিন বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, আগামী নভেম্বর মাসে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সেই নির্বাচনে তাকে হারাতেই চীন ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করছেন, চীনের সঙ্গে তিনি যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, এতে চীনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর সে কারণে বেইজিং চায়, তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ক্ষমতায় বসাতে।
তার আগেও চীনের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার অভিযোগ আনেন ট্রাম্প। তার ধারণা, ভাইরাসটি সম্পর্কে চীন বিশ্বকে যথাযথ তথ্য দেয়নি।
আবার চীনকে জড়িয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলেন, তার দেশ বেশি অর্থ দিলেও সংস্থাটির চীনমুখিতা দেখা যাচ্ছে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সংস্থাটি তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ অভিযোগ তুলে সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশও দেন তিনি।
তারও দুই দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা রয়েছে। তাই সব দেশের উচিত, চীনের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া।
অন্যদিকে, মার্কিন গোয়েন্দারা এর আগে অভিযোগ করেন, চীনের উহানের একটি গবেষণাগার ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। সেখানে তারা জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে।