
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, কল-কারখানাসহ সবকিছু। স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতেও চলছে স্থবিরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে রোজা তাই এভাবে সবকিছু বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। এ সময় সীমিত আকারে কোথাও কোথাও কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা ভাবছি।
আজ সোমবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আট জেলার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় গাজীপুর জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে সীমিত আকারে কিছু কারখানা খোলার কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু ইন্ডাস্ট্রি আছে রপ্তানিমুখী, যেগুলো বন্ধ থাকার কারণে ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। যদি তারা সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে, শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে কাজ করতে পারে তাহলে কিছু কিছু জায়গায় কাজ শুরুর কথা ভাবছি আমরা। তবে সেটা করার আগে ওই এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী আছে কিনা, থাকলে কী পরিমান তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘অনেক ইন্ডাস্ট্রির নিজস্ব জায়গা আছে। সেখানে যদি তারা শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে তো কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চালু করার চিন্তা করা যায়। তবে গার্মেণ্টস খোলার কথা বলে যেভাবে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে, সেভাবে অবশ্যই নয়। সম্পূর্ণ সুরক্ষার ব্যবস্থা করে নিজেদের পরিবহনের মাধ্যমে যদি শ্রমিকদের নিয়ে আসা যায় তাহলেই কিছু প্রতিষ্ঠান আমরা খুলে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন – ‘এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪০ পিস পিপিই (পার্সোনাল প্রোক্টেটিভ ইক্যুইপমেন্ট) সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে, চিকিৎসক-নার্স যারা রোগী দেখেন, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী দেখেন, তাদের ব্যবহারের জিনিসগুলো যদি সবাই মিলে যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমরা চিকিৎসক-নার্সদের দেব কীভাবে। সেটাও একটা প্রশ্নের বিষয়।’
তিনি বলেন, সংগ্রহ করা পিপিই’র মধ্যে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৯টি বিতরণ করা হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ রোগী দেখার জন্য, আর সেগুলো রোগী দেখার জন্য বা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদেরই ব্যবহার করতে হবে।’
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এই ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ সদরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সুরক্ষার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রথম থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এ ব্যাপারে সচেতনও করা হয়েছে। তাদের সুরক্ষার জন্য পিপিই, মাস্ক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে গ্লাভস, ক্যাপ, জুতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
এর আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের ৪০টি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গতকাল রোববার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৬ জন। সেইসঙ্গে সুস্থ হয়েছেন ৭৫ জন।