১৯একাত্তর থেকে ২০বিশ, ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ পুলিশ

“১৯একাত্তর থেকে ২০বিশ ছাত্রলীগ এবং, বাংলাদেশ পুলিশ”

সাল টা ১৯৭১। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বাঙ্গালীর। হয় স্বাধীন হও, নয়তো লাশ হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাও। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে, দেশ মাতৃকার অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজেদের জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে, এ দেশকে স্বাধীন করতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ-সহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়। মার্চ মাস, ১৯৭১ সাল। স্বাধীনতার প্রশ্নে উত্তাল দেশ। ২৫ মার্চ সকাল থেকেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এক অদ্ভূত নীরবতা। চারদিকে আশঙ্কা, রাতেই হতে পারে আক্রমণ। রাত তখন ১১ টা থেকে ১২ টার মাঝামাঝি, ঘুমন্ত পুলিশ বাহিনীর ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ। চারদিক থেকে সমানে গুলি করা হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ভিতরকে লক্ষ করে। অপ্রস্তুত পুলিশ সদস্যদের যাকেই সামনে পাচ্ছে গুলি করে মারছে মিলিটারিরা। কিন্তু, দৃঢ়প্রত্যয়ী পুলিশ সদস্যদের পুরোনো থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলির কাছে হার মেনে পিছু হটতে বাধ্য হলো এসএমজি, এলএলজি, পিস্তল, কামান এবং আধুনিক গোলাবারুদ দ্বারা সুসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনী। প্রতিরোধী পুলিশ সদস্যদের কাউন্টারে “অপারেশন সার্চলাইট” এ প্রথমবারের মত প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই নয় মাস বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন আরো বহু পুলিশ সদস্য। বাঙ্গালী ইতিহাসের পাতায় যাদের স্মৃতি চিরভাস্মর হয়ে থাকবে। আজ স্বাধীনতার এতো বছর পরে স্বাধীন বাংলাদেশে এক নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে, এ যুদ্ধ কোনো শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। এ যুদ্ধ এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে, যার নাম কোভিড-১৯। মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের উহান প্রদেশ থেকে হলেও সারাবিশ্ব এর আক্রমণে বিপর্যস্ত, টাল-মাটাল। সারা বিশ্বের বহু মানুষ মারা যাচ্ছে এই ভাইরাসে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ভাইরাসটির আগমণ কিছুটা দেরীতে হওয়ায়, বাংলাদেশের এখনো সুযোগ রয়েছে এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করার। কিন্তু সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা। কিন্তু নিম্ন আয়ের এ দেশে বহু পরিবার দিন আনে দিন খায়। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাঁচার লক্ষে ঘরবন্দী থাকার কারণে যখন তারা অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটানো শুরু করলো ঠিক তখনই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গর্বিত কর্মীরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৩ টি উপজেলায় এবং, ৬৪০ টি থানা এলাকায় বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলো। উচ্চবিত্তরা ভাইরাসের আবির্ভাবে আগেই প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করে ফেলেছে এবং নিম্নবিত্তরা বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু বাকি রইলো মধ্যবিত্ত। তারা না পেরেছে মজুদ করতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু দরিদ্র জেলা, উপজেলায় নিম্নবিত্তদেরও ত্রাণ সংকট দেখা গেলো। ঠিক তখনি এগিয়ে এলো জনগণের ভরসার ঠিকানা বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের আইজি মহোদয়ের নির্দেশে, মেট্রোপলিটন কমিশনারদের এবং, রেঞ্জ ডিআইজি দের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার রা দিনের আলোয় ত্রাণ বিতরণ এবং ফোন পেলে রাতের আঁধারে মধ্যবিত্তের পরিচয় গোপন রেখেই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার/ এডিশনাল এস পি, এএসপি/ সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং ইন্সপেক্টরদের মাধ্যমে খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের কাছে পাঠাচ্ছেন। এবং, বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যদের একদিনের সম্মানী এবং সিনিয়র অফিসারদের বৈশাখী ভাতা মিলিয়ে মোট ২০ কোটি টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সকল জায়গাতেই নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু উজার করে দিচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংগ্রামী কর্মীরা এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গর্বিত সদস্যরা। বাঙ্গালীদের জীবন রক্ষার এই লড়াইয়ে, বাংলাদেশকে রক্ষার এই লড়াইয়ে জয় আবারো হবে আপনাদের অদম্য মন মানসিকতার, হার না মানা দৃঢ়চেতা মনোভাবের। স্যালুট জানাই আপনাদের। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সালাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সালাম বাংলাদেশ পুলিশ

লেখকঃ শেখ রুমু, সহ-সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ