
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির জন্য কালো তালিকাভুক্ত করাটা এখন লোকদেখানো হয়ে গেছে। শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত অনেকেই প্রতিষ্ঠানের প্যাড আর ঠিকানা বদলে আগের মতোই মালামাল সরবরাহ করে যাচ্ছে। ভাগাভাগি হচ্ছে শত কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে কালো তালিকাভুক্তির পরও রাজধানীর একটি বাসভবনে কাজ পরিচালনা করছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ও অনিক এন্টারপ্রাইজ। এখনো সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ যে পরিচালিত হচ্ছে তার প্রমাণ মেলে স্টোর রুমে আর প্রক্রিয়াধীন কিছু নথিপত্রে। কালো তালিকাভুক্ত এই দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এই একই পরিবারের আরোও ৩টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মুন্সী ফররুখ ও তার আত্মীয়রা। সবগুলোই পরিচালিত হতো, ফররুখ আহমদের ভাই জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সাবেক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেনের ছত্রছায়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮ -১৯ অর্থবছরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে আহমেদ ইন্টারপ্রাইজ ছাড়াও মেসার্স এ এস এল, মেসার্স আর সি এস এন্টারপ্রাইজ এর ঠিকাদারির মূল্যতালিকা দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। দুই অর্থ বছরে ঠিকাদারি এই তিনটি প্রতিষ্ঠান ১৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। যেখানে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯৫৪ হাজার টাকা , মেসার্স আর সিএস থেকে ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, মেসার্স এ এস এল ১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা কাজ পায় ৬ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে।
স্বাস্থ্যখাত বিশেষজ্ঞ রশিদ ই মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনায় সংস্কার দরকার। একই সাথে জবাবদিহিতার আওতায় যদি না আনেন ওই দুদক ইনকোয়ারি করবে অভিযুক্ত বের করবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ঠিকাদারিতে ঘুরে ফিরে কাজ পাচ্ছেন নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান । যার মধ্যে ১৬ টির বিরুদ্ধেই কোনো না কোনো হাসপাতালের ঠিকাদারিতে অস্বাভাবিক মূল্যে সরঞ্জাম সরবরাহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত। এই সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশের অভিযোগে জড়িত অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান রয়েছে দুদকের টেবিলে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ই-টেন্ডারিংয়েও গড়মিল পাওয়া যায়, দুর্নীতি হয়। আমরা বলেছি ই-টেন্ডারিং সিস্টেম বা পিপিআর এগুলোর রিভিউ প্রয়োজন। যতই পরামর্শ করি না কেন আমাদের তদন্ত চলবে।
এছাড়াও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ১২ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৯১ কোটি টাকার যে কেনাকাটা ও যন্ত্রপাতি ক্রয় হয় যার ২শ’ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি। ১৬-১৭ অর্থ বছরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৩ হাজার কোটি টাকার কেনাকাটার বেশিরভাগেই দুর্নীতি হয়ছে। সব মিলে দেখা যায়, প্রতি অর্থবছরেই স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের একটি বড় অংশ লোপাট হচ্ছে।