রোগীদের জন্য প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করবেন ডা. জাফরুল্লাহ

কোভিড-১৯ দ্রুত শনাক্তের কিট বেশ কিছু দিন আগেই উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তা নিয়ে নানা দেন-দরবারের কারণে এখনো আটকে আছে অনুমোদন। কিন্তু এর মধ্যেই আবার প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর নিয়েছেন প্লাজমা থেরাপি। এতে বেশ উপকার পেয়েছেন। আক্রান্ত নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই বাসাতেই আইসোলেশনে ছিলেন প্রবীণ এ চিকিৎসক। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বেশ দুর্বলতা অনুভব করায় নিজের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যান।

সেখানে যাওয়ার পর এক ব্যাগ রক্ত নেন। নিয়মিত কিডনি চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডায়ালাইসিসও করান। সেইসঙ্গে নেন প্লাজমা থেরাপি। করোনায় আক্রান্ত সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা নেওয়ার পর শারীরিকভাবে বেশ চাঙ্গা অনুভবন করেন। এর পরই তিনি ভাবেন, দেশের সব মানুষেরই প্লাজমা থেরাপি সুবিধা পাওয়া উচিত। আর সেই ভাবনা থেকেই প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

আজ শুক্রবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার এই সিদ্ধান্তের কথা একটি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। নিজে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে বিষয়টি বুঝতে পারছি।

তিনি বলেন, গতকাল শারীরিকভাবে বেশ দুর্বলতা অনুভব করার পর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গিয়ে এক ব্যাগ রক্ত নেন। এ ছাড়া কিডনির নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডায়ালাইসিসও করান। তবে প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার পর বেশ চাঙ্গা অনুভব করেন। তার মতে, সব করোনা রোগীর প্লাজমা থেরাপি পাওয়া উচিত।

‘শুধু আমরা কয়েকজন সুবিধা (প্লাজমা থেরাপি) পাবো, আর দেশের অন্য মানুষ বঞ্চিত হবে, তা হতে পারে না,’ বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আজই প্রাথমিক কাজকর্ম করবেন জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, এর জন্য কিছু সরঞ্জাম লাগবে, যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। প্রফেসর ডা. মহিউদ্দিন খান ঢাকা মেডিকেল এবং শিশু হাসপাতালে কাজ করছেন ডা. হারুন। তারা অত্যন্ত মহৎ কাজ করছেন। তাদের সেই কাজের অংশ হিসেবেই গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিচ্ছি।

তিনি জানান, সরঞ্জামাদি বিদেশ থেকে আমদানি করতে গেলে অর্থেরও প্রয়োজন হবে। অর্থের সংকুলান না হলে প্রয়োজনে গণস্বাস্থ্যের সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যদি উড়োজাহাজে করে আনা যায়, তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সরঞ্জাম এনে প্লাজমা ব্যাংক স্থাপন করতে পারবো।

কিন্তু কথা হলো- করোনা রোগী থেকে শুরু করে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা নিয়ে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে সব মানুষ প্লাজমা থেরাপি পাবে- এ ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত?

এ ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এটা অবাস্তব কিছু না, বরং বাস্তবে এটা করা সম্ভব। ডা. মহিউদ্দিন খানের পরামর্শে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে বুঝতে পারছি, করোনা রোগের জন্য এটা অত্যন্ত কার্যকর। এখন যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন, তাদের বুঝাতে হবে প্লাজমা ডোনেট করার জন্য। সবাই মিলে উদ্যোগ নিতে হবে এবং দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে। এতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন এবং শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তারা খুব সহজে প্লাজমা ডোনেট করতে পারবেন।

প্রবীণ এ চিকিৎসক আরো বলেন, প্লাজমা দান করার মতো দেশে অনেক মানুষ আছেন। যতটা মনে হচ্ছে, কাজটা তত কঠিন নয়। বরং আমাদের যে সামর্থ্য আছে তা নিয়েই দ্রুত শুরু করলে দেশের মানুষ খুব উপকৃত হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এর জন্য আমাদের এখন প্রধান কাজ হলো- সেইসব মানুষকে খুঁজে বের করা, যারা করোনা আক্রান্তের পর সুস্থ হয়েছেন। আবার এমন লোকও আছেন, যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন অথচ নিজে বুঝতেই পারেননি। তাদের শরীরেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

কিন্তু কীভাবে এত মানুষের মধ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে? গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, তাদের খুঁজে পেতে হলে ব্যাপকহারে পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে কিট আছে তা দিয়ে মাত্র ৩-৫ মিনিটের মধ্যে টেস্ট করানো সম্ভব। আমাদের কিটের সাফল্য যে শতভাগ সেটা আগেও বলেছি, এখনো বলছি। আমি নিজে টেস্ট করে পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছি। পরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টেস্ট করেও একই রেজাল্ট এসেছে।