
দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এতে অনেক রোগীর মৃত্যুর খবরও গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। সংক্রমণের ভয়ে বেশ কিছু হাসপাতাল তাদের কার্যক্রমই বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে একসঙ্গে করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার কাজে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
রোববার দেশের একটি দৈনিক প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য যেসব ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে, তার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি আরো ১১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এছাড়া যেসব বড় বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে, সেগুলোকেও করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সকলের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোতে নতুন এক পদ্ধতি চালু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি চিকিৎসকরা। তাদের মতে, প্রতিটি হাসপাতালকে তিনটি আলাদা আলাদা জোনে ভাগ করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন দেশে থাকা চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিটি হাসপাতালকে প্রাথমিক, কোভিড ও নন-কোভিড জোনে ভাগ করতে। যাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে এমন কোনো সন্দেহভাজন রোগী আসলে তাকে প্রথমে প্রাথমিক জোনে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান ও নমুনা পরীক্ষা করা যায়। পরে নমুনা পরীক্ষায় যদি তার করোনা পজিটিভ আসে তাহলে তাকে কোভিড জোনে ভর্তি এবং নেগেটিভ আসলে নন-কোভিড জোনে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যাবে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, চিকিৎসার নতুন এই পদ্ধতিটি নিয়ে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারা এটিকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সবার মতামতে ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে গতকাল একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে সেটি অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ রোববার বা আগামী কাল সোমবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরো বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু প্রতিটি হাপাতালেই আলাদা আলাদা জোন করা হবে, সেহেতু ঝুঁকি বাড়ার সুযোগ নেই।
নতুন এ চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ট্রিটমেন্ট প্রটোকল প্ল্যানের অন্যতম সদস্য ও সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হবে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে কেউ কেউ এ পদ্ধতি চালু হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, হাসপাতালগুলোকে আলাদা আলাদা জোনে ভাগ করা হলেও চিকিৎসা প্রদানের স্বার্থে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরস্পরের সংস্পর্শ আসতে হবে। ফলে পুরো স্বাস্থ্য কমিউনিটি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন নূন্যতম চিকিৎসা সেবা প্রদান করার মতো কেউ থাকবে না। তাই ভালো করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।