
আমরা প্রাথমিক ভাবে জানি পদার্থের অবস্থা তিনটি (কঠিন, তরল, গ্যাসীয়)। কিন্তু আকষ্মিক ব্যাপার হচ্ছে পদার্থের অবস্থা চারটি। পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে ‘প্লাজমা’।
আমরা যদি বরফকে তাপ দেই তাহলে পানি পাব, আর পানিকে তাপ দিলে বাষ্প পাব। এবার বাষ্পাকে একটি আবদ্ধ পাত্রে রেখে উচ্চমাত্রায় তাপ দিলে কি ঘটবে ? প্রথমত পানির গঠনকারী মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আলাদা হয়ে যাবে এবং হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রন পরস্পর আলাদা হয়ে মুক্তভাবে বিচরন করবে। অথ্যাৎ নিউক্লিয়াস ও ইলেক্ট্রনের মধ্যে কোন আকর্ষণ বল থাকবে না। এই অবস্থার নাম প্লাজমা। প্লাজমা হলো ইলেক্ট্রন এবং আয়নের মিশ্রন।
রসায়ন ও পদার্থবিদ ইরভিং ল্যাংমুয়ার প্রথম ‘প্লাজমা’ শব্দটি আয়ন যুক্ত গ্যাসের বর্ণনা হিসাবে প্রবর্তন করে। প্লাজমা হলো উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নিত গ্যাস, যেখানে মুক্ত ইলেক্ট্রন এবং ধনাত্মক আয়ন প্রায় সমপরিমানে থাকে। প্লাজমার কণাগুলি আয়নিত হওয়ায় গ্যাসের সাথে এর কিছু আচরণগত পার্থক্য আছে। তবে গ্যাসের মতোই প্লাজমার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে এটি ফিলামেন্ট, বীম বা দ্বি-স্তর গঠনে পরিনত হতে পারে। এর সকল কণাগুলো তড়িৎ চার্জ যুক্ত। ফলে ইলেকট্রিক ও ম্যাগনেটিক ফিল্ড দ্বারা প্লাজমাকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গ্যাস দুটি উপায়ের যে কোন একটিতে প্লাজমা হতে পারে। দুটি বিন্দুর মধ্যকার বিশাল বিভব পার্থক্য অথবা বস্তুতে উচ্চ তাপমাত্রা প্রবাহ। পদার্থকে উচ্চ তাপমাত্রায় তাপ দিলে পরমাণুগুলো ছেড়ে যেতে শুরু করে, যা মুক্ত ইলেক্ট্রনের উপস্থিতিতে ঘটে। উচ্চ তাপমাত্রায়, যেমনটা নক্ষত্রে থাকে।
পদার্থবিদ অ্যান্ডি হারসকোভিচ আবিষ্কার করেন যে, প্লাজমাকে পাতলা শিট-এর মতো আকৃতি দেওয়া গেলে এর মাধ্যমে বাতাস থেকে শূন্যমাধ্যমকে আলাদা করা যেতে পারে। তিনি এর নাম দেন প্লাজমা উইন্ডো।
সূর্যের কেন্দ্রে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং সামান্য পরিমাণ অন্যান্য ভারী মৌল যে ভৌত অবস্থায় বিরাজ করে তার নামও প্লাজমা। আর যেখানে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে থাকে। প্লাজমার শক্তি গ্যাসীয় অবস্থার চাইতে অনেক বেশী।
আমরা প্লাজমার সঙ্গে তেমন পরিচিত নই। যদিও এটি আসলে পৃথিবীতে অহরহই দেখা যায়। আমরা সকলেই আকাশের বিদ্যুৎ চমকানো, বৈদ্যুতিক স্পার্ক, ফ্লুরোসেন্ট বাতি বা টিউব লাইট, আকাশের উজ্জ্বল তারা , নিত্তন বাতি –এ গুলোকে খুব ভালো ভাবে চিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলো সবই হচ্ছে প্লাজমা অবস্থার আলোকিত বস্তুগুলোর উদাহরণ। এছাড়া আমরা শিল্প কারখানায় বা জাহাজের লোহার পাত কাটার ক্ষেত্রে একধরনের নীলচে গ্যাসীয় শিখা দেখতে পাই। এটি মূলতো প্লাজমা টর্চ। প্লাজমা টর্চ হচ্ছে প্লাজমা নির্দেশিত প্রবাহ উৎপাদন করার জন্য একটি ডিভাইস বা মাধ্যম। কারেন্ট (ডিসি), বিকল্প কারেন্ট (এসি), রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) অন্যান্য গ্যাসীয় বিক্রিয়ক এবং স্রাবের মাধ্যমে টর্চে তাপীয় প্লাজমা উৎপাদিত হয়। প্লাজমা টর্চ দ্বারা ধাতব পদার্থ কাটা হয়। এ ক্ষেত্রে কয়েক হাজার (প্রায় ৫৫০০) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লাজমা অবস্থার উৎপত্তি হয়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত প্লাজমা হল নিয়ন সাইন। নিয়ন সাইন হল লম্বা আলোকসজ্জাযুক্ত গ্যাস-স্রাব নলের দ্বারা আলোকিত বৈদ্যুতিক সাইন যা পাতলা নিয়ন বা অন্যান্য গ্যাস ধারন করে। এটির সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে নিয়ন আলোকসজ্জা। জর্জ ক্লাউড ১৯১০ সালের ডিসেম্বরে প্যারিস মোটর শোতে প্রথম আধুনিক রূপে প্রদর্শিত হয়েছিল। গত কয়েক দশকে অবশ্য এই সাইনেজ শিল্পটি হ্রাস পেয়েছে।
মোঃ রেজাউল ইসলাম
শিক্ষার্থী ( তড়িৎকৌশল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগ )
গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ