
অনিয়মের আরেক নাম মুগদা জেনারেল হাসপাতাল।সরকার নির্ধারিত কোভিড হাসপাতাল গুলোর মধ্যে অন্যতম আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী সংযোজিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি যেন অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রোগী ও তার স্বজনদের সাথে নার্সদের দুর্ব্যবহার, সময়মতো ডাক্তার না থাকা।
আনসারদের করোনা টেস্টের সিরিয়াল বাণিজ্য সহ পরিচালনাপর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত হোটেল সুপার স্টারে রুম ভাড়া করে থাকা খাওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তাই হাসপাতালের পরিচালক ও হোটেল সুপার স্টার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক তথ্য ও নথিপত্র চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরকম শতাধিক অভিযোগ আছে এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে আনসারদের সিরিয়াল বাণিজ্যের ছবি তুলতে গেলে দেশ রূপান্তর আলোকচিত্র সাংবাদিক কে মেরে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে।এত অভিযোগের পরও কোন অজানা শক্তির কারণে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।এরইমধ্যে অবহেলাজনিত কারণ ও বিনা চিকিৎসায় কিছু রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অনিয়ম প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী কাজী মাহমুদুর রহমান জানান, “আমার চাচা মোহাম্মদ লিটন কে দুই দিন আগে করোনা পজিটিভ হওয়ায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। করোনার পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকায় সপ্তাহে দুইবার তার ডায়ালিসিস করতে হতো ।আমরা বাড্ডার বেটার লাইফ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতাম। করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত কাল (৩রা আগষ্ট) সকালে তার প্রথম ডায়ালাইসিস ছিল, ডায়ালাইসিস এর শুরুতে একজন নার্স হাতে মেশিন সেটাপ করে চলে যায়। একটু পরেই হাতের সুচ খুলে রক্ত বের হতে থাকে বারবার ডাকার পরেও নার্স পাওয়া যায়নি ।
নিজেরা চেষ্টা করেও রক্ত বন্ধ করতে পারিনি ।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার চাচা ধীরে ধীরে মৃত্যুর ঝুঁকে পড়ে,এবং শেষ পর্যন্ত দুপুর ২টার সময় মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দায় কে নেবে, আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
অনিয়ম প্রসঙ্গে আরেক রোগীর স্বজন মোহাম্মদ রিফাত বলেন, আমার পিতা মোঃ তোফাজ্জল হোসেনকে ১৫ দিন আগে এই হাসপাতলে ভর্তি করি হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই পিতার সুস্থতার জন্য নার্সের সাহায্য না পেয়ে নিজেই পিতার সেবা-শুশ্রূষা করা শুরু করি। যেকোনো সময় নিজেও আক্রান্ত হতে পারি জেনেও এ কাজ করেছি শুধুমাত্র নার্সদের অবহেলার কারণে। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় আমার পিতা গতকাল রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এরকম হাজারো অভিযোগের পাহাড় রয়েছে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে পরিচালনা কমিটি নার্স ডাক্তার ও আনসারদের বিরুদ্ধে।এখন ভুক্তভোগীদের একটাই চাওয়া যেহেতু দুদক এসবের অনিয়মের বিরুদ্ধে নেমেছে ,তাই তারা আশা পোষণ করেন দুদক এ ব্যাপারে সঠিক অনুসন্ধান করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
প্রতিবেদক : টিটু আহম্মেদ (স্টাফরিপোর্টার)