ভাঙন আতঙ্কে পদ্মা পারের মানুষ

ফের শুরু হয়েছে বর্ষা, ফের পদ্মার গর্জন। ভাঙনের মুখে গ্রাম, বিস্তীর্ণ জমি। আতঙ্কিত মানুষ। কখন জানি নিজের বসত ভিটা বিলিন হয়ে যায় পদ্মায়। এভাবে প্রতি বছরই পদ্মায় বিলিন হয় লৌহজংয়ের পদ্মা পারের মানুষ বসত বাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বিস্তীর্ণ জমি। ছুটে আসে সরকারি কর্মকর্তা আর জনপ্রতিনিধি। আশ্বাস দেওয়া হয় ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সামান্য জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া স্থায়ী বাঁধের তেমন কোন উদ্যোগ নেই ভাঙনরোধে।

বর্ষার শুরুতে এবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে লৌহজংয়ের কুমারভোগর খড়িয়া আর হলদিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকা জুঁড়ে। গতবছরও খড়িয়া গ্রামে পদ্মার ভাঙনে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলিন হয়েছে। ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে এসব বাড়ির লোকজন। ছুটে এসেছিলেন জনপ্রতিনিধিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। কিন্তু ভাঙনরোধে গেলো মৌসুমে এখানে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এবছর বর্ষার শুরুতেই খড়িয়া এলাকায় দেখা দিয়েছে পদ্মার ভাঙন। ইতিমধ্যে একটি বাড়ি নদীর ভাঙনে বিলিন হয়েছে। স্থানীয় এমপি অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি’র তাৎক্ষনিক হস্তক্ষেপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় জরুরী বিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের পদক্ষেন নেওয়া হয়েছে। খড়িয়া ও দক্ষিণ হলদিয়ার ২টি মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর গ্রামের অসংখ্য বাড়িঘর রক্ষায় কোন প্রকার প্রকল্প ছাড়াই জরুরী বিত্তিতে রবিবার থেকে এখানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

কিন্ত স্থানীয়দের দাবি, তারা চায় স্থায়ী বাঁধ। যা তাদের ভিটেবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষা করতে পারবে। তারা বছর বছর নদী ভাঙন শুরু হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ চায় না। তারা চায় স্থায়ী সমাধান।

কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের সাবেক মেম্বার সাহেব আলী বলেন, প্রতি বছরই ভাঙছে, ছোট হচ্ছে লৌহজংয়ের মানচিত্র। পদ্মার ভাঙনে লৌহজংয়ের মানচিত্র বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। বিলীন হয়েছে শত শত পরিবারের বসত ভিটা। তারপরেও আমাদের আস্থা রয়েছে স্থানীয় এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি আপার উপর। আজও তাঁর নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সাথে তরিৎ জিও ব্যাগ ফেলতে সহযোগিতা করি। তিনি অবশ্যই এ এলাকার ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

পানি উন্নন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-১) টিএম রাশিদুল কবীর জানান, জরুরী ভিত্তিতে এখানে জিও ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রবিবার থেকেই জিও ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলা হচ্ছে। এ কাজের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। তবে এখানে একটি স্থায়ী বাঁধের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ৪১৬ কোট ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লৌহজংয়ের খড়িয়া দক্ষিণ হলদিয়াসহ টঙ্গীবাড়ির কিছু এলাকায় এ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। যার দৈর্ঘ হবে প্রায় ৮.৪ কিলোমিটার। প্রস্তাবনা আকারে প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু সংশোধনীর জন্য আবারো পাঠানো হয়েছে আমাদের কাছে। সংশোধিত প্রকল্পটি শিঘ্রই জমা দেয়া হবে। এ বর্ষায় এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্পটি পাশ হলে আগামী শুস্ক মৌসুমে এ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি) আসনের এমপি অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মার ভাঙনে আমার এলাকার জনগণ ক্ষতবিক্ষত। এ বছরও ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে মাধ্যমে সেখানে জরুরী ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের কাজ করা হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এদেশের জনগণের জন্য সব সময়ই কাজ করে যাচ্ছে। এ এলাকায় স্থায়ী বাঁধের জন্যও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার জন্য আমি দীর্ঘ দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ রাখছি।