
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক কিডনির বদলে দুটি কিডনি অপসারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে ঘটনায় হাসপাতালটির ইউরোলোজি বিভাগের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন ভুক্তভোগীর ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার।
ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলালকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা এই হত্যা মামলার বাকি আসামিরা হলেন- একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারুক হোসেন, ডা. মোস্তফা কামাল ও ডা. আল মামুন।
তথ্যটি নিশ্চিত করে পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএম শামীম বলেন, রোগীর মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাদী রফিক শিকদার জানান, তার মা রওশন আরার একটি কিডনিতে সংক্রমণ হয়। সেটি নিয়ে ২০১৮ সালের ১ জুলাই তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করান। চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এর কিছু দিন পর ফের হাসপাতালে ডেকে জানানো হয় যে, মায়ের বাম কিডনি নাকি ফেলে দিতে হবে।
পরে ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনিটি ফেলে দেন এই চিকিৎসকরা। পরবর্তীতে অন্য একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করে জানতে পারি, মায়ের দুটো কিডনিই ফেলে দেয়া হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে ওনার অবস্থার অবনতি ঘটে, যোগ করেন তিনি।
‘এ ঘটনা সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে চিকিৎসক হাবিবুর রহমান লিখিতভাবে অপরাধ স্বীকার করেন। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন যে, নিজ খরচে তিনি কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন। কিন্তু কালক্ষেপণ করে হাসপাতালের আইসিইউয়ের লাইফ সাপোর্টে কোমায় ফেলে রাখেন মাকে। সেখানেই গত ৩১ অক্টোবর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।’
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই এতদিন থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ভুক্তভোগীর ছেলে অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসকরা হয়তো প্রতিবেদন কোনোভাবে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকরা রওশন আরার কিডনি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২ বছরের একটি শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ কিডনি দেয়া হয়েছিল। যদিও ওই শিশুকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। আবার সেখানে চিকিৎসক ডা. মামুনের মাও ভর্তি ছিলেন এবং তার দুটি কিডনিই নষ্ট ছিল। পরবর্তীতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন।
বাদীর অভিযোগ এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেই হত্যা মামলা নেয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, এখন আইন অনুযায়ী মামলার তদন্ত হবে। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।